শুক্রবার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:৪১
ইসলামী উম্মাহর ঐক্যই শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের চাবিকাঠি

ইরানের ধর্মীয় নগরী মাশহাদের জুমার ইমাম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আহমদ আলামুল হুদা বলেছেন, ইসলামী উম্মাহর ঐক্যই শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:  আয়াতুল্লাহ আলামুল হুদা মিলাদুন্নবী (সা.) ও ঐক্য সপ্তাহ সম্পর্কে বলেন, সপ্তাহে ওয়াহদাত (ঐক্যের সপ্তাহ) হচ্ছে মুসলিম মাজহাবসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি জোরদারের সুবর্ণ সুযোগ।

সপ্তাহে ওয়াহদাত: ঐক্যের বার্তা
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জুমার খুতবায় হযরত ইমাম রেজা (আ.)-এর পবিত্র হারামে আয়াতুল্লাহ আলামুল হুদা বলেন, সপ্তাহে ওয়াহদাত নবী করিম (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইমাম খোমেইনির (রহ.) উদ্যোগে ঘোষিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল সুন্নি-শিয়া ভ্রাতৃত্বকে সুদৃঢ় করা। আজ যে বোমা ফিলিস্তিনি সুন্নিদের ওপর নিক্ষেপ হয়, সেই একই বোমা ইরানি শিয়াদের ওপরও বর্ষিত হয়। অর্থাৎ, ইসলামের শত্রু এক এবং তারা সুন্নি-শিয়া উভয়ের রক্ত ঝরাচ্ছে।

ঐক্যই প্রতিরোধের মূল শক্তি
তিনি বলেন, ঐক্য হলো প্রতিরোধের আসল শক্তি এবং বিজয়ের রহস্য। ১২ দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, শুধু সামরিক সরঞ্জামই নয় বরং ঐক্য ও প্রতিরোধই শত্রুর পতনের প্রধান কারণ।

আয়াতুল্লাহ আলামুল হুদা উল্লেখ করেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত থেকে দেশে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং অভ্যন্তরীণ কিছু উপাদানের সঙ্গে মিলে অস্থিরতা ও বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল—একদিকে শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের হত্যা, অন্যদিকে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটকে ব্যবহার করে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতা ছড়িয়ে ইরানকে ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল। কিন্তু জনগণের ঐক্য ও প্রতিরোধ শত্রুর এই চক্রান্ত ব্যর্থ করেছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য স্থায়ী থাকতে হবে। যদি ঐক্য দুর্বল হয়, তবে প্রতিরোধের শক্তি হারিয়ে যাবে।

ঐক্যের প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়
মাশহাদের ইমাম জুমা বলেন, ঐক্যের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো অবহেলা, গাফিলতি ও বিভাজন সৃষ্টি। তাই প্রতিটি মতবাদ ও মাজহাবকে সম্মান করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই একই কিতাব ও একই নবীর অনুসারী এবং আমাদের শত্রুও অভিন্ন। ফিলিস্তিনের গাজা আজ তার স্পষ্ট প্রমাণ।

তিনি আরও বলেন, জাতিগত বিভাজন ও অন্ধ জাতীয়তাবাদ ঐক্য ভাঙার বড় কারণ। যারা শুধু নিজের জাতির স্বার্থে কাজ করে, তারা কার্যত শত্রুর হাতিয়ার। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব ও আমেরিকাপ্রীতিও মুসলিম ঐক্যের জন্য বড় হুমকি।

হুকুমতে তাওহিদ ও ভিলায়াতের গুরুত্ব
আয়াতুল্লাহ আলামুল হুদা বলেন, ইসলামের শত্রুরা ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র চালায়, অথচ কুরআন ঐক্যের সর্বোচ্চ শিক্ষাগ্রন্থ। আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।”
ইরানে সেই রজ্জু হলো বেলায়াতে ফকিহ, যা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করে। তাই বেলায়াত মেনে চলাই ঐক্যের নিশ্চয়তা।

নবী করিম (সা.)-এর জন্ম: তাওহিদের শাসনের সূচনা
খুতবার আধ্যাত্মিক অংশে আলামুল হুদা নবী করিম (সা.)-এর জন্মবার্ষিকীর বৈশ্বিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু আরবদের জন্য নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত ও হিদায়াতের বার্তা নিয়ে আসেন। তাঁর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক অলৌকিক ঘটনা ঘটে—কাসরার প্রাসাদে ফাটল ধরে, আগুনে জ্বলতে থাকা জরথুষ্ট্রীয় আগ্নেয় মন্দির নিভে যায়, সাওয়ার হ্রদ শুকিয়ে যায়। এগুলো তাওহিদের শাসন প্রতিষ্ঠা ও শিরকের অবসানের সূচক ছিল।

তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)-এর জন্ম মানবজাতিকে নূর ও রহমতের বার্তা দিয়েছে এবং এ পথই পরবর্তীতে হযরত ইমাম মাহদী (আজ.)-এর আবির্ভাবের ভূমিকা রচনা করেছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha